জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর জীবনবৃত্তান্ত একটি অনুপ্রেরণামূলক ইতিহাস, যা সংগ্রাম, নেতৃত্ব এবং দেশের প্রতি আত্মনিবেদনের পরিচায়ক।
জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মনসুর রহমান একজন সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন, এবং মাতা জাহানারা খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী। জিয়ার শৈশব কাটে কলকাতা ও করাচিতে, কারণ তাঁর পিতা বিভিন্ন সরকারি পদে কর্মরত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন স্বপ্নবাজ ও অধ্যবসায়ী।
জিয়াউর রহমান করাচির ডি. জে. স্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি হন এবং ১৯৫৫ সালে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসার হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরপরই নিজের দক্ষতা ও নেতৃত্বের গুণাবলীর জন্য পরিচিত হন। কুমিল্লায় সেনা প্রশিক্ষণে তিনি একজন অসাধারণ ক্যাডেট হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে সেনা কর্মকাণ্ডে অংশ নেন এবং পেশাগত ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি লাভ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জিয়াউর রহমানের জীবনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা যখন ঢাকায় নিরীহ মানুষ হত্যা শুরু করে, তখন তিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এক বিরাট অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।
তিনি মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১১ নম্বর সেক্টরের নেতৃত্ব দেন। তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে জয়লাভ করেন। তাঁর বীরত্বের জন্য তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত হন।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ওই সময়ে সেনাবাহিনীতে একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবে জিয়াউর রহমান আবির্ভূত হন। তিনি প্রথমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। তাঁর শাসনামলে তিনি কৃষি, শিল্প, এবং অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দেন। তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে বিদেশি সাহায্য ও বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়িত হয়।
কৃষি খাতে উন্নয়ন: কৃষকদের জন্য সেচ ব্যবস্থা উন্নতকরণ, সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রবর্তন করেন।
শিক্ষা ও অবকাঠামো: শিক্ষার প্রসারে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেন।
বহির্বিশ্বে সম্পর্ক উন্নয়ন: বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান মজবুত করেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানের সময় জিয়াউর রহমান নিহত হন। তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি শোকাবহ অধ্যায়। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় দেশের জন্য যে অবদান রেখেছেন, তা আজও মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।